জনসাধারণের চাহিদা পূরণকল্পে তথা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণ, উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপনসহ ব্যাপক পরিসরে চাহিদা পূরণ করার জন্য বর্তমানে আমদানী নিয়ন্ত্রণ বিধি ও পদ্ধতি সহজীকরণ এবং উদার করা হয়েছে। সে অনুসারে পণ্য আমদানী প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমনঃ (১) বিদেশ হতে দেশে পণ্য আনয়ন, এবং (২) পণ্যের মূল্য বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধকরণ। (১) পণ্যেরণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন আমদানী ও রপ্তানী নিয়ন্ত্রকের দপ্তর কর্তৃক পার আমদানী ও রপ্তানীর বিষয়াবলী নিয়ন্ত্রীত হয়ে থাকে। আমদানী মূল্য পরিশো সাম্রান্ত নিয়মনীতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ কর্তৃক নিয়ন্ত্রীত হয়।
আমদানীকারকগণ তাদের নির্ধারিত কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিকট হতে নিবন্ধন নিতে হয়। এতদলক্ষ্যে আবেদনপত্রের সাথে যেসব কাগজপত্রাদি দাখিল করতে হবে তা ‘রেজিষ্ট্রেশন’ অধ্যায়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানী করতে হলে প্রধান আমদানী ও রপ্তানী নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে পণ্য আমদানীর জন্য IRC সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহ এলসিএ ফরম বা “লেটার অব ক্রেডিট অথরাইজেশন ফরম” এর মাধ্যমে আমদানীর অনুমোদন দিয়ে থাকে। তাই আমদানী করতে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ ব্যাংক হতে এলসিএ ফরম সংগ্রহ করতে হবে। নিম্নোক্ত দলিলপত্র এরূপ আবেদনপত্রের সাথে ব্যাংকে দাখিল করার পর ব্যাংক এলসিএ ফরম এবং সংযুক্ত কাগজপত্র সতর্কতার সাথে যাচাই করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবন্ধন ইউনিটের নিকট তা অগ্রায়ন করবে। আমদানী লাইসেন্সীং এর আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূহ নিম্নরূপঃ
(ক) আমদানীকারক কর্তৃক পূরণকৃত এবং স্বাক্ষরিত এলসি এর দরখাস্ত
(খ) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি, ইন্ডেন্ট অথবা প্রোফরমা ইনভয়েস;
(গ) ইনস্যুরেন্স কভার নোট;
(ঘ) চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি অথবা অনুমোদিত বাণিজ্যি সমিতির সদস্যপদ সনদ;
(ঙ) আয়কর পরিশোধ করা হয়েছে মর্মে ঘোষণাপত্র;
(চ)আমদানী নিবন্ধন সনদের নবায়ন ফিস পরিশোধের দলিল:
(ছ) ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশন সার্টিফিকেট।
উল্লেখ্য যে, পণ্য বিনিময়/ঋণ/মজুরি ইত্যাদির আওতায়আমদানীর ক্ষেত্র বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল হতে যদি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় না হয়ে থাকে তবে উক্তরূপ নিবন্ধন করা আবশ্যক নহে।
৪। ক্রয় চুক্তি সম্পাদন
লাইসেন্স প্রাপ্ত হলে আমদানীকারকের পরবর্তী কাজ হল বিদেশী বিক্রেতা বা সরবরাহকারীদের সাথে সরাসরি বা স্থানীয় প্রতিনিধি (local agent/indentor) মধ্যমে ক্রয় চুক্তিতে উপনীত হওয়া। সাধারণতঃ বিক্রেতা বা সরবরাহকারী ইয়াকৃত প্রোফরমা ইনভয়েস/ইন্ডেট এর মাধ্যমে এরূপ ক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং এই প্রোফরমায় বর্ণিত চুক্তির শর্তাবলী মেনে নিয়ে তাতে আমদানীকারকের স্বাক্ষর একতে হয়। উল্লেখ্য যে, সিএন্ডএফ মূল্য ১০ লাখ টাকার উপরে হলে আমদানীকারককে সরবরাহকারী স্থানীয় এজেন্টের সাথে চুক্তি করলে চলবে কিন্তু উক্ত সিএন্ডএফ মূল্য ১০ লক্ষ টাকার অধিক হলে অনুরূপ চুক্তি সরাসরি সরবরাহকারীর সাথে করতে হবে এবং এক্ষেত্রে লাইসেন্সীং কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
এল/সি খোলা বলতে আবেদনকারী/আমদানীকারক এর অনুরোধে ব্যাংক কর্তৃক রপ্তানীকারক/বেনিফিসিয়ারীর বরাবরে এলসি ইস্যু করাকে বুঝায়। যে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলা হয় তাকে L/C Opening Bank বা Issuing Bank বলে। আবেদনকারী প্রাথমিকভাবে তার নিজস্ব লেটার প্যাডে লিখিতভাবে তার মনোনীত ব্যাংকের নিকট এলসি খোলার ইচ্ছা ব্যক্ত করবে। অর্থাৎ সরবরাহকারী সাথে আমদানীকারীর পণ্যের চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর আমানিকারক মনোনীত ব্যাংকের পক্ষে পরিবহনের সকল ঝুঁকি কভার করে নৌ বীমা পলিসি সংগ্রহ করে সরবরাহকারী পণ্য মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা দিয়ে তার অনুকূলে স্থানীয় ব্যাংকে এলসি খোলার আবেদন করবে। বাংলাদেশে শুধুমাত্র অমোচনীয় এলসি এর মাধ্যমে আমদানী করা যায়। ফলে আমদানীকারক বিদেশী সরবরাহকারী সাথে ক্রয়চুক্তি যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সমীচীন। তাই বলা হয়ে থাকে যে, “আমদানী লাইসেন্স ও স্থির ক্রয় চুক্তিপত্র সহ এলসি খুলতে হয়।” এরূপ ক্রয় চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধান করে এলসিএ ফরম পূরণ এবং আমদানী ঋণের ব্যবস্থা নিতে হবে। উপরোক্তভাবে মনোনীত স্থানীয় ব্যাংকের নিকট এলসি খোলার আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক যে সকল বিষয় নিশ্চিত করবে তা হলঃ
এলসি ও তৎসংশ্লিষ্ট উপরোক্ত বিষয়াদি সহ অন্যান্য তথ্যাদি সঠিক থাকলে এলসি খোলার জন্য যে মার্জিন দরকার তা অনুমোদন করে অবশিষ্টাংশ আমদানী বল প্রিন্সেবে মঞ্জুর করা হয়। মার্জিন অফারিং সিট প্রণয়নের জন্য যে সকল বিষয় উল্লেখ করা দরকার তা হলঃ
এলসি খোলার পর উহার কোন সংশোধনের আবশ্যকতা দেখা দিলে UCPDC এর ধারা ৬ অনুসারে এলসির সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের সম্মতি নিয়ে তাতে সংশোধনী আনয়ন করা যাবে। এলসির কোন সংশোধনীর জন্য ক্রেতা-বিক্রেতা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক (সমূহ) এর ঐক্যমত দরকার। এলসি সংশোধনীর বিবরণী আমদানীকারকের অনুরোধক্রমে এবং সরবরাহকারীর সম্মতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সকল পক্ষকে সরবরাহ করবে। সাধারণতঃ নিম্নে বর্ণিত হেতুবাদে একটি এলসিতে সংশোধন আসতে পারে, যেমনঃ
চুক্তিভুক্ত পণ্য জাহাজে প্রেরণ করার পর বিক্রেতাকে এলসিতে বর্ণিত কাগজপত্র সংগ্রহ ও প্রস্তুত করতে হয়। এ পর্যায়ে তাকে শিপিং কোম্পানী থেকে বিল অব লেডিং সার্টিফিকেট অব অরিজিন, এদ্রুত করে ব্যাংকে দাখিল করতে হয়। এলসির শর্ত মোতাবেক ব্যাংক তার ইত্যাদি কাছ থেকে কাগজপত্র গ্রহণ করে নেগোশিয়েট করে থাকে। নেগোশিয়েটি গ্রাহকের রাজত্রে ওপেনিং ব্যাংকের নির্দেশ মোতাবেক রপ্তানীকারক কর্তৃক বিনিময় বিলও রক্ত দাখিলকৃত সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যথাযথভাবে যাচাই করে রপ্তানীকারককে সাথে সাথে পাওনা পরিশোধ করে দিবে এবং নেগোশিয়েটিং ব্যাংক যে পরিমাণ অর্থ রপ্তানীকারককে প্রদান করেছে উক্ত পরিমাণ অর্থ এবং কমিশনসহ যদি এলসিতে কৌত তৃতীয় কোন ব্যাংকের উল্লেখ থাকে তার নিকট দাবী করবে। উক্ত দাবী অনুসারে তৃতীয় ব্যাংক নেগোশিয়েটিং ব্যাংকের দাবী মিটিয়ে দিবে। এরূপ তৃতীয় বাংক Reimbursing ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এ পর্যায়ে নেগোশিয়েটিং ব্যাংক রপ্তানীকারক কর্তৃক গৃহীত সকল দলিলাদি ওপেনিং ব্যাংকের নিকট অগ্রায়ন করবে। ওপেনিং ব্যাংক এলসি শর্ত মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র তিনটি ধাপে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবে। এ ব্যাপারে নেগোশিয়েটিং ব্যাংক কাগজপত্র সঠিকভাবে বেনিফিসিয়ারী কর্তৃক দাখিল করা হয়েছে কিনা তা ইস্যুইং ব্যাংককে নিশ্চিত করার পর ইস্যুইং ব্যাংক এলসি এর শর্ত অনুসারে এগুলো যথাযথ যাচাই-বাছাই করে UCPDC অনুসারে নিম্নোক্ত কাগজপত্রাদি নিশ্চিত করবে।
> কাগজপত্রসমূহ নির্ধারিত তারিখের মধ্যে নেগোসিয়েট করা হয়েছে কিনা;
> এলসিতে বর্ণিত অর্থের পরিমাণ দলিলে বর্ণিত অর্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ রয়েছে কিনা;
> এলসি যেভাবে চাওয়া হয়েছে বিনিময় বিল সেভাবে ড্র করা হয়েছে কিনা;
> পণ্যের ইনভয়েস আমদানীকারকের নামে করা হয়েছে কিনা;
> মালামালের সবিস্তার বর্ণনা, প্যাকেট সংখ্যা, ওজন, মূল্য ইত্যাদি সঠিক কিনা;
> বিল অব লেডিং নিখুঁত কিনা; মাল জাহাজে তোলা হয়েছে কিনা;
> মাশুল পরিশোধিত ও ইস্যুইং ব্যাংকের নির্দেশে এনডোর্স করা হয়েছে কিনা;
➤ পণ্য বোঝাইকরণের ও পণ্য খালাসের বন্দরদ্বয়ের নাম সঠিকভাবে উল্লেখিত আছে কিনা;
> পণ্য প্রাপকের নাম, জাহাজীকরণের তারিখ এলসি অনুসারে করা হয়েছে কিনা:
➤ শিপিং কোম্পানী বা তার প্রতিনিধি কর্তৃক বিল অব লেডিং যথাযথভাবে স্বাক্ষরিত কিনা এবং ইনভয়েসের বর্ণনা অনুসারে তা করা হয়েছে কিনা:
➤ ওজন তালিকা, প্যাকিং লিষ্ট, পিএসআই সার্টিফিকেট ইত্যাদি দলিলাদি এলসির শর্ত অনুসারে সমন্বিত কিনা।
সাবিতির কাগজপত্রের উপরোক্ত কোনহিতকে গরমিল দেখা দিলে বাথর যথা দাবি সংশ্লিষ্ট আমদানীকারককে তা অবহিত করে। এর গ্রহণযোগ্যতা কার যথাশীঘ্র যদি আমদানীকারক আলোচ্য কোন তথ্য অগ্রহণযোগ্য মর্মে মত দেয় তার উক্ত পণ্য সম্পর্কে গৃহীতব্য ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়ে নেগোশিয়েটিং ব্যাংকের নিকট বার্তা পাঠাবে। আর উপরোক্ত তথ্যাবলী ঠিক বা বেঠিক থাকুক আমদানীকারক তা গ্রহণযোগ্য মর্মে মত দিলে তা ব্যাংকের বইতে পিএডি ডেবিট করে। এভাবে পরীক্ষার পর ব্যাংক আমদানীকারকের দেশের মুদ্রাকে অফিসিয়াল রেট এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তরিত করবে এবং অতঃপর এলসি খোলার সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এলসিতে সম্ভাব্য ত্রুটি বা অসামঞ্জস্যতাসমূহ নিম্নোক্তভাবে হতে পারে, যেমনঃ