রপ্তানী পদ্ধতির বিভিন্ন দিক
রপ্তানীকারকের কোন পণ্য রপ্তানীর ক্ষেত্রে যে সকল আবশ্যকীয় কার্যাদি সম্পন্ন করতে হয় তা নিম্নরূপঃ
রপ্তানী নিবন্ধন (Registration):
পণ্য রপ্তানীর পূর্বে প্রথমেই রপ্তানীকারককে আমদানী-রপ্তানী নিয়ন্ত্রকের অফিস হতে রপ্তানী নিবন্ধন (Export Registration) সার্টিফিকেট বা ইআরসি সংগ্রহ করতে হবে। এতদক্ষেত্রে যে সকল দলিলপত্র দাখিল করতে হবে তা নিম্নরূপঃ
- রপ্তানীকারকের জাতীয়তা সনদ;
- ট্রেড লাইসেন্স;
- ব্যাংক সলভেন্সী সার্টিফিকেট;
- আয়কর পরিশোধের সার্টিফিকেট;
- প্রযোজ্যতা মোতাবেক, কারবার নিবন্ধীকরণ সনদ (কোম্পানী আইনমতে);
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি;
- রপ্তানীকারকের ভোটার আইডি কার্ডের অনুলিপি;
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আইনগত কাগজপত্র;
- কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময় সময় যাচিত দলিলাদি।
উপরোক্ত দলিলপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমদানী ও রপ্তানী নিয়ন্ত্রণ বিধি, ১৯৫০ এর আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক/ট্রেজারী/সোনালী ব্যাংকে নির্ধারিয়ন্ত্রণ বিধি, দিয়ে হিসেবে ট্রেজারী চালানের মূল কপি অগ্রগণ্যতা পায়। ইআরসি বৎসরান্তে নবায়ন করার বিধান রয়েছে।
রপ্তানী আদেশ (Export Order):
নিবন্ধন সংগ্রহ করার পর রপ্তানীকারককে পণ্য রপ্তানীর আদেশ সংগ্রহ করতে হবে। এই আদেশ সংগ্রহের জন্য রপ্তানীকারককে নিম্নোক্ত তিনটি বিষয় সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করতে হবে, যেমনঃ
- যোগাযোগঃ রপ্তানীকারক বাজার গবেষণার মাধ্যমে কা িখত ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে, টেলেক্স, ফ্যাক্স, পত্রযোগাযোগ, ই-মেইল, ইন্টারনেট, ই-বাণিজ্য ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
- পণ্যের নমুনা প্রেরণঃ পণ্যের নমুনা প্রেরণের জন্য আমদানীকারকের সাথে যথাযথ যোগাযোগ করা যেতে পারে। প্রয়োজনে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর সাথে যোগাযোগ করে ক্রেতার সাথে তা পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া যায়।
- ক্রেতার আর্থিক স্বচ্ছলতাঃ ক্রেতা পূর্ব পরিচিত না হলে রপ্তানী চুক্তি সম্পাদনের পূর্বে রপ্তানীকারক ব্যাংক, বণিক সমিতি, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, দূতাবাস ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রেতার আর্থিক সামর্থ্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
চুক্তি সম্পাদন (Contract Agreement):
আমদানীকারক ও রপ্তানীকারকের মধ্যকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে উভয় দেশ (সমূহ) এর প্রচলিত আইনের আওতায় বৈধ চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। যে দলিলে চুক্তির সকল উপাদান বর্ণিত থাকে তাকে প্রোফর্মা চালান বলে, যা রপ্তানী বাণিজ্যের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এরূপ চুক্তি করার সময় যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা দরকার তা হলঃ
- পণ্যের পরিমাণ ও মান;
- পণ্যের বীমাকরণ;
- পণ্যের মূল্য কোন বিক্রয় শর্তের ভিত্তিতে হবে তার নির্ধারণ;
- পণ্যের বিবরণ;
- প্যাকিং ও মার্কিং এর বর্ণনা;
- পণ্য জাহাজীকরণের সময় ও পণ্য প্রেরণের স্থান, গন্তব্যের ঠিকানা ইত্যাদি নির্ধারণ;
- মূল্য পরিশোধের শর্তাদি।
চুক্তিতে ব্যক্ত বা অব্যক্ত কোন শর্তের অবর্তমানে উত্থাপিতব্য আপত্তি নিষ্পত্তি পদ্ধতির সবিস্তার বর্ণনা।
এলসি খোলা ও ইস্যুইং ব্যাংকের দায়িত্ব (Opening Letter of Credit & Responsibility of Issuing Bank):
চুক্তি সম্পাদনের পর রপ্তানীকারক তার রপ্তানীকৃত পণ্যের মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট আমদানীকারককে এলসি খোলার জন্য আবেদন জানাবে। ব্যাংক যদি আমদানীকারকের ব্যাংক সলভেন্সী সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দলিলপত্রের সঠিকতা সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়, তবে উক্ত ব্যাংক রপ্তানীকারকের পক্ষে এলসি খুলবে এবং রপ্তানীকারকের দেশের সংশিষ্ট উক্ত রাতেndent ব্যাংককে এলসির মূর্তসমূহসহ তা নেগোশিকোট করতে আনাসির নির্দেশ দিবে। ইস্যুইং ব্যাংক বিদেশস্থ Correspondent ব্যাংককে বিল নেগোশিতের নির্দেশ দিয়ে সতর্কমূলক নির্দেশিকা দেয়া সমীচীন। কারণ চুক্তি বা এলসির শর্তটি অনাদায়ে যথাযথ নির্দেশিকা প্রেরণে ইস্যুইং ব্যাংক ব্যর্থ হলে তাতে যদি চুক্তিভঙ্গের দায়ে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে ইস্যুইং ব্যাংকের উপর ঐ ক্ষতিপূরণ দানের দায়িত্ব বর্তাবে। এজন্য ইস্যুইং ব্যাংক সুবিধাভোগকারী বা রপ্তানীকারকের কাছ থেকে ক্রেডিট এডভাইস বা এলসিতে বর্ণিত শর্তসমূহ সংক্রান্ত undertaking নিয়ে নেয়া উচিত। এরূপ ক্রেডিট এডভাইসে বর্ণিত থাকবে যে, (ক) এলসিটি নিশ্চিত নাকি অনিশ্চিত, (খ) এলসিটি প্রত্যাহারযোগ্য না অপ্রত্যাহারযোগ্য, উহাতে অনুমোদিত স্বাক্ষর নিশ্চিত কিনা।
সুবিধাভোগকারীর প্রক্রিয়া (Beneficiary’s Procedure):
রপ্তানীকারককে তার প্রেরিতব্য পণ্যের মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য নিম্নে বর্ণিত যেকোন একটি পদ্ধতির এলসি খোলার Advise গ্রহণ করতে হবে, যেমনঃ
এলসি বা Advise টি প্রত্যাহারযোগ্য কিনা; )
এলসি বা Advise টি অপ্রত্যাহারযোগ্য কিনা; এরূপ ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীর সাথে কোন যোগাযোগ ছাড়াই এলসি বাতিল বা সংশোধন করা যায় অথবা রপ্তানীকারকের দেশের স্থানীয় ব্যাংক বা নেগোশিয়েটিং ব্যাংক চুক্তিপত্র এবং এলসির শর্ত অনুসারে আবশ্যকীয় কাগজপত্র প্রাপ্তির পর মূল্য বা Draft পরিশোধের দায়িত্ব নিতে পারে। এলসি গ্রহণের পূর্বে রপ্তানীকারককে যে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে খেয়াল করা উচিত তা হলঃ
- বেনিফিসিয়ারী বা রপ্তানীকারকের নাম ও ঠিকানা যথাযথ কিনা:
- পণ্য বোঝাইকরণের বন্দর ও খালাসের বন্দর সংক্রান্ত নির্দেশটি চুক্তি অনুসারে যথাযথ কিনা;
- বীমা কভারেজ বিক্রয় শর্ত সাপেক্ষ কিনা;
- ভাড়া ও বীমার প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশোধের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সমীচীন:
- এলসিতে বর্ণিত মূল্য চুক্তিপত্রমতে যথাযথ হয়েছে কিনাচ > এলসিতে ও চুক্তিতে বর্ণিত মালামাল অভিন্ন কিনা।।
- এলসিতে ড্রাফট পেশকরণের জন্য পর্যাপ্ত সময়সীমা এবং ব্যাংকে দলিলাদি পাঠানোর শেষ সময়সীমা নির্ধারিত হয়েছে কিনা;
- চুক্তির কোন শর্ত প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হয়েছে কিনা।
- চুক্তি অনুসারে বর্ণিত দলিলপত্রের সাথে এলসিতে বর্ণিত দলিলপত্র সঙ্গতিপূর্ণ কিনা।
পণ্য দ্রব্য সংগ্রহ (Collecting Goods):
আমদানীকারক কর্তৃক রপ্তানীকারকের অনুকূলে এলসি খোলার পর রপ্তানীকারক পণ্যসমূহ সংগ্রহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হয়। এ পর্যায়ে পণ্য ক্রয়, প্যাকিং ইত্যাদির জন্য অর্থ দরকার হলে রপ্তানীকারক তার ব্যাংকের নিকট পণ্য বন্ধক রেখে ঋণের আবেদন জানাতে পারে। আবার Original Export L/C এর বিপরীতে উৎপাদনকারীর বরাবর একটি ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলেও পণ্য সংগ্রহ করার প্রচলন বিদ্যমান।
বিক্রয় নিবন্ধীকরণ (Sales Registration):
কতিপয় পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানীকারককে EPC এবং ERC ফরম পূরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে নিবন্ধন নিতে হয়। এরূপ নিবন্ধণের অবর্তমানে শুল্ক কর্তৃপক্ষ পণ্য জাহাজীকরণের ছাড়পত্র নাও দিতে পারে।
পণ্য জাহাজীকরণ (Goods Shipment):
চুক্তিপত্র বা এলসির শর্ত অনুসারে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানীকারক পণ্য জাহাজীকরণ করতে হবে। এরূপ সময় বর্ধিত করা প্রয়োজন হলে ক্রেতা বা আমদানীকারকের অনুমতি নেয়া আবশ্যক। জাহাজে পণ্য বোঝাই পূর্বে, শিপিং স্পেস বুকিং, প্যাকেজিং ও প্যাকিং, রপ্তনি পণ্যের সংরক্ষণ, বন্দর চার্জ প্রদান, জাহাজী দলিলপত্র ইত্যাদি সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে জাহাজীকরণ সংক্রান্ত সিএন্ডএফ এজেন্টকে নিম্নোক্ত বিষয়ে সঠিক নির্দেশ দেয়া আবশ্যক, যেমনঃ
- কত সময়ের মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণ করা হবে।
- ড্র ব্যাক প্রাপ্তির জন্য কাষ্টমস হাউজ হতে কখন এবং কিভাবে আনুষঙ্গিক দলিলপত্রাদি সংগ্রহ বা প্রত্যায়িত হবে;
- যে সকল পণ্যের ক্ষেত্রে আবগারী শুল্ক আরোপযোগ্য সেগুলোর ক্ষেত্রে কর প্রদান ছাড়াই কি উপায়ে ওয়ারহাউজ থেকে পণ্য বের করতে হবে;
- মূল ও স্বাক্ষরিত বিল অব লেডিং এর সংখ্যা ও তা কোন্ ব্যাংকের উপর ড্র করা হবে;
- রপ্তানী চুক্তি সংক্রান্ত কান্ত আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি;
পণ্য জাহাজীকরণে কান্ত আনুষাঙ্গিক বিভাগীয় নিয়মকানুন অনুসারে সিএন্ডএফ এজেন্টের কাছে নিম্নোক্ত দলিলপত্র প্রেরণ করতে হয়, যেমনঃ
- ইআরসি (রপ্তানী নিবন্ধীকরণ সনদপত্র):
- প্যাকিং লিষ্ট;
- পাটজাত দ্রব্য এবং কাঁচাপাট জাহাজীকরণের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ইপিই ও ইপিসি ফরম;
- পণ্য বীমা সংক্রান্ত সনদ:
- বাণিজ্যিক ইনভয়েস;
- শুল্ক কর্তৃপক্ষেল নির্ধারিত ডিবিএফ ৯/এ ফরম, যার মাধ্যমে রপ্তানী ঘোষণা করা হয়,
- রপ্তানি কারকের ব্যাংক হতে সঠিকভাবে পূরণকৃত ইএক্সপি ফরম চার কপি, বিক্রয় চুক্তি বা এলসির ফটোকপি;
- পণ্য বোঝাইকরণ বন্দরের পণ্য মাশুল বা ভাড়া পরিশোধের জন্য ব্যাংক হতে পণ্য মাশুল সনদ।